রূপান্তরকামী হয়ে ভারতে কর্মক্ষেত্রে কীভাবে ট্রানজিশন করবেন ?
এই নিবন্ধের চারজন রূপান্তরকামী নারীদের অভিজ্ঞতার কথা রয়েছে যেগুলি তাদের কর্মক্ষেত্রে ট্রানজিশনের ফলে হয়েছে। এই মহিলাদের প্রত্যেককেই কয়েকটি প্রশ্ন করা হয় যেমন ট্রান্সজেন্ডার হিসাবে বেরিয়ে আসা এবং তাদের বন্ধু বা সহকর্মীদের কাছ থেকে সমর্থন পেতে কোনও বাধা এসেছিল কিনা |
অংশগ্রহণকারী:
নাজারিয়া: সরকারি ব্যাঙ্কে কাজ করেন
আনিয়া: কল সেন্টারে কাজ করেন
শাহিস্তা : বি পি ও সেক্টরে কাজ করেন
লক্ষ্মী: একটি মার্কেটিং প্রতিষ্ঠানে সোশাল মিডিয়া বিশেষজ্ঞ হিসাবে কাজ করেন ।
আপনি কি আপনার কর্মক্ষেত্রে আপনার ট্রানজিশন সম্পর্কে জানিয়েছেন?
নাজারিয়া: হ্যাঁ
অনিয়্য: হ্যাঁ, আমি কয়েকজনকে বলেছি যাইহোক, আমি আমার সমস্ত আইনি নথিপত্রে আমার লিঙ্গ চিহ্ন পরিবর্তন করে মহিলা করে আমি যে একজন রূপান্তরকামী নারী হয়ে উঠেছি সেটা বলিনি । আমার নতুন সহকর্মীরা কিছু জানেন না।
শাহিস্টা: হ্যাঁ, এবং সবাই এমনকি আমার ম্যানেজার এবং অন্যরাও আমার মনোনীত নাম ধরেই আমাকে ডেকেছেন , এমনকি যখন আমি আমার সব নথিপত্রে পুরোনো নাম এবং আমার পুরোনো লিঙ্গ চিহ্নই ব্যবহার করি।
লক্ষ্মী: সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট নয়, কিন্তু আমার বেশীরভাগ সহকর্মীরা আমার সম্পর্কে জানেন।
আপনি কিভাবে আপনার শরীরের যে পরিবর্তনগুলি হচ্ছে সেগুলি ব্যাখ্যা করেছেন, সহকর্মী এবং বন্ধুরা যখন জিজ্ঞাসা করেন ?
নাজারিয়া: আমি আমার কর্মস্থলে যোগদানের আগেই আমার সম্পর্কে তাদের বলেছিলাম, তাই তাদের অধিকাংশই জানত যে আমি ট্রানজিশনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি এবং আমাকে কিছু জিজ্ঞাসা করেনি। কর্মক্ষেত্রে কেউ কখনো আমাকে কিছু ব্যাখ্যা করতে বলেনি ।
অ্যানিয়া: আমি সাধারণত তাদের বোঝাই কিভাবে দেহে হরমোন কাজ করে, বাকিটা তারা বুঝে নেয় ।
শাহেস্টা: আমি এই কোম্পানিতে মহিলা হিসাবে যোগদান করেছিলাম , যদিও সেই সময়ে দৃশ্যত আমার শরীরে কোনও নারীসুলভ পরিবর্তন ছিল না (আমি তখনই হরমোন শুরু করেছিলাম ) | তবে আমার সহকর্মীরা আমার চেহারা নিয়ে মজা করত এবং হাস্যকর কৌতুক করত আমাকে নিয়ে |
আমি তাদের ভালো করে সময় নিয়ে তাদের বুঝিয়েছিলাম যে আমি কিসের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি, তাদের মধ্যে বেশির ভাগই, বিশেষ করে মহিলারা আমার সাথে খুব ভাল ব্যবহার করত এবং আমি যেমন, তেমনভাবেই তারা আমাকে গ্রহণ করেছিল ।
লক্ষ্মী: আমি সাম্প্রতিক মেডিক্যাল রূপান্তর শুরু করেছি, অর্থাৎ আমি খুব বেশিদিন আগে থেকে হরমোন নেওয়া শুরু করিনি। এরইমধ্যে আমি আমার চুল বড় করছিলাম এবং আমার কানে ফুঁটো করিয়েছিলাম, এবং খুব সামান্য দাড়ি ছিল তাই আমার চেহারা ছিল বেশ নারীসুলভ। এই জন্য প্রচুর অদ্ভূত চাহনি আমার দিকে এসে পড়ত |
যদিও বেশীরভাগ মানুষ বিনীত ব্যবহার করত , এমন কিছু সহকর্মী ছিলেন যারা আমার চেহারা এবং আচরণের ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন। প্রাথমিকভাবে আমি তাদেরকে বলেছিলাম যে আমি সমকামী এবং আমি নিজেকে মেয়েলি দেখাতে চাই। যাইহোক, এখন আমি হরমোনে আছি এবং খুব শীঘ্রই বিভিন্ন পরিবর্তন দেখা যাবে চেহারায় , এখন সম্ভবত আগে যতজনকে বলেছিলাম তার থেকে বেশী লোককে বলতে হবে।
রূপান্তরকামী ব্যক্তি হিসাবে বেরিয়ে আসার কোনো কুফল কী আপনি কর্মক্ষেত্রে ভোগ করেছেন?
নাজারিয়া: আমার ক্ষেত্রে না, সম্ভবত কারণ আমি একটি সরকারী সংস্থায় কাজ করি; আমি কোন বৈষম্যর সম্মুখীন হয়নি।
অনিয়া : না। আমি কখনো প্রতিকূল কিছুর সম্মুখীন হয়নি। আমি একটি MNC তে কাজ করি এবং সেখানে নিয়ম আছে যাতে কর্মীরা বৈষম্য না করতে পারে তা নিশ্চিত করার জন্য ।
আমার মতে, এই সংস্থাগুলি শুধুমাত্র আপনার কাজের উপরেই আগ্রহী এবং অন্য কোনও বিষয়ে তারা উদ্বিগ্ন নয় । আমি উপলব্ধি করেছি যে, কিছুটা হলেও, এটি আপনার অ্যাটিটিউড এবং কীভাবে আপনি জিনিসগুলিকে সামাল দেন তার উপর নির্ভর করে । আমার ক্ষেত্রে , ব্যাপারটা আমার দলের অন্যান্য ব্যক্তিদের মতই স্বাভাবিক ।
শাহেস্টা: আমার প্রথম দিনের কাজের কথা মনে পড়ছে যখন সব মেয়েরা আমাকে শৌচালয়ে নিয়ে গিয়েছিল, যা ঘটনাক্রমে একটি মহিলা শৌচালয়ে আমার প্রথমবার যাওয়া ছিল। আমি যখন বাথরুমে প্রবেশ করি তখন কেঁদে ফেলেছিলাম এছাড়াও, আমার অন্য এক সময়ের কথা মনে পড়ছে, সেই সময় যখন আমার সহকর্মীদের সামনে আমাকে কিছু কথা বলতে বলা হয়। আমার সব সংগ্রামের কথা আমি তাদের বলেছিলাম এবং এর পরে, যারা আমাকে নিয়ে মজা করত তারাও এগিয়ে এসেছিল এবং তাদের সমর্থন জানিয়েছিল ।
আমি কিছু সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিলাম, যেখানে ক্যাব ড্রাইভার আমাকে ‘স্যার’ বলে সম্বোধন করত এবং আমার বাড়ির কাছে আমাকে ছাড়তে অস্বীকার করত , যা মহিলা কর্মীদের জন্য একটি থাকার সুবিধা ছিল।
লক্ষ্মী: আমাকে অনেকে অদ্ভুত প্রশ্ন করেছে যেমন “ওহ, তুমি কি পুরুষ না নারী পছন্দ কর?” বা “যখন আপনি ওই ওষুধ (হরমোন) গ্রহণ করবেন না তখন কি আপনার স্তন বৃদ্ধি পাবে?” ইত্যাদি। আমি সাধারণত তাদের খুব বিনয়ীভাবে বলি যে এই ধরনের প্রশ্ন অনুপযুক্ত এবং ছেড়ে দাও।
এছাড়াও, আমি একটি দল পরিচালনা করি এবং আমি দেখেছি যে আমার দলের সদস্যরা আমাকে গুরুত্ব সহকারে যাতে গ্রহণ করে তার জন্য আমার কর্তৃত্বকে জোর দিতে হয়েছে। একজন প্রকৃতই মেয়েলি মানুষ হিসাবে যে আবার ট্রান্সজেন্ডার , আমাকে অনেক বেশি প্রচেষ্টা করতে হয় যাতে লোকেরা আমাকে গুরুত্ব সহকারে নেয়।
ভবিষ্যতের জন্য আপনাকে আশাবাদী এবং দৃঢ় রেখেছে এমন কর্মক্ষেত্রের কতগুলি মুহূর্ত?
নাজারিয়া: আত্মবিশ্বাস | আপনার কারুর সমর্থন প্রয়োজন হবে না, যদি আপনি নিজেকে সমর্থন করেন l
অনিয়্য: হ্যাঁ আমার সহকর্মীরা অত্যন্ত সহায়ক, সংবেদনশীল এবং যত্নশীল হয়েছে। আমি তাদের জন্য শুধুই অন্য আর একজনের মতই ছিলাম। আমার ট্রান্স পরিচয় তাদের কাছে কোন ব্যাপার নয় ।
শাহেস্টা: আমার খুব বুদ্ধিমান এবং মিষ্টি ম্যানেজারের জন্য আমি ভাগ্যবান ছিলাম, যিনি আমার একজন বোন হওয়ার জন্য এসেছিলেন। তিনি আমার পক্ষে লড়াই করেছিলেন এবং আমার সমস্ত দস্তাবেজে আমার লিঙ্গ চিহ্ন নারীতে পরিবর্তিত করেছিলেন এমনকি তখনও আমি আইনগতভাবে তা করিনি। এর ফলে আমার কোম্পানির মহিলা কর্মচারীদের যে সমস্ত সুবিধা প্রদান করা হয়েছিল তার সবগুলোই আমাকে পেতে সাহায্য করেছিল।
লক্ষ্মী: কর্মক্ষেত্রে আমার দলের সদস্যরা আমাকে ক্রিসমাসের জন্য একটি অলঙ্কৃত চুলের কাঁটা এবং সুন্দর হাতের আয়না দিয়েছিল এবং আমাকে বলেছিল যে আমি যেমন, তেমনভাবেই তারা আমাকে গ্রহণ করেছিল । এটা আমার জন্য কর্মক্ষেত্রে খুব খুশির মুহূর্ত ছিল |
আপনি যদি আপনার ট্রান্জিশন প্রক্রিয়ার পুনরাবৃত্তি করতে পারেন, এবং এটি ভিন্নভাবে করতে পারেন, কর্মক্ষেত্রে আপনার রূপান্তরণ করার জন্য আপনার পদ্ধতিতে আপনি কি পরিবর্তন করবেন?
নাজারিয়া: কিছুই নয় |
অ্যানিয়া: আমার মনে হয় না কিছু পরিবর্তন করার আছে। আমি সঠিক পথই অনুসরণ করেছি |
শাহেস্তা: আমি নিশ্চয়ই অনেক আগেই ট্রান্জিশন করতাম এবং আমার সহকর্মীদের সাথে কথা বলতাম, যারা আমার সম্পর্কে খারাপ মন্তব্য করেছিল। আমি তাদের বুঝিয়ে দিতাম অন্যদের নিয়ে মজা করা কিভাবে অন্যদের সত্যিই কষ্ট দেয় ।
লক্ষ্মী: আমি অনেক আগেই ট্রান্জিশন শুরু করতাম।
** অংশগ্রহণকারীদের পরিচয় ও গোপনীয়তা রক্ষা করতে নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।